Thursday, October 12, 2023

মুসলিমদের আচরণ

 


উমর রা. -এর শাসনামল

একদিন দু’জন লোক এক বালককে টেনে ধরে হযরত উমর (রা.) এর দরবারে নিয়ে আসলো। উমর (রা.) তাদের কাছে জানতে চাইলেন, ব্যাপার কী? কেন তোমরা একে এভাবে টেনে এনেছো? তারা বললো, এই বালক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। উমর (রা.) বালককে বললেন, তুমি কী সত্যিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছো? বালকটি বললো, হ্যাঁ! আমি তাদের বাবাকে হত্যা করেছি। তবে তা ছিলো দুর্ঘটনাবশত। আমার উট তাদের বাগানে ঢুকে পড়েছিলো এবং তা দেখে তাদের পিতা একটি পাথর ছুড়ে মারলো, যা উটের চোখে লাগে। আমি দেখতে পাই যে, উটটি খুবই কষ্ট পাচ্ছিলো। যা দেখে আমি রাগান্বিত হই এবং একটি পাথর নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারি। পাথরটি তার মাথায় লাগে এবং সে মারা যায়। উমর (রা.) দু’ভাইকে বললেন, তোমরা কী এ বালককে ক্ষমা করবে? তারা বললো, না! আমরা তার মৃত্যুদণ্ড চাই। উমর (রা.) বালকটির কাছে জানতে চাইলেন, তোমার কী কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?


বালকটি বললো, ‘আমার পিতা মারা যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যান, যা আমি এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছি। আমি তিনদিন সময় চাই, যাতে আমি সেই জিনিসগুলো আমার ভাইকে দিয়ে আসতে পারি। আমার কথা আপনি বিশ্বাস করুন। উমর (রা.) বললেন, আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি, যদি তুমি একজন জামিন জোগাড় করতে পারো। যে নিশ্চয়তা দেবে যে তুমি ফিরে আসবে। বালকটি দরবারের চারদিকে তাকালো কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে কেউই তার জামিন হলো না। সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ দরবারের পেছন থেকে একটি হাত উঠলো। কার হাত ছিলো এটি? তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী আবু যর গিফারী (রা.)। তিনি বললেন, আমি তার জামিন হবো। চিন্তা করুন! জামিন মানে হলো, যদি বালকটি ফিরে না আসে তবে আবু যর গিফারীর (রা.) শিরছেদ করা হবে। সুতরাং বালককে ছেড়ে দেওয়া হলো। প্রথম দিন গেলো, দ্বিতীয় দিনেও বালকটি আসলো না।

তৃতীয় দিনে দু’ভাই আবু যর গিফারীর (রা.) কাছে গেলো। আবু যর (রা.) বললেন, আমি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে আবু যর গিফারী (রা.) দরবারের দিকে রওনা হলেন। মদিনার লোকজন তার পেছন পেছন যেতে লাগলো। সবাই দেখতে চায় কী ঘটে আজকে। আবু যর (রা.) একটি বালকের ভুলের কারণে আজ জীবন দিচ্ছেন। হঠাৎ আজানের কিছুক্ষণ আগে বালকটি দৌড়ে আসলো। লোকেরা সবাই অবাক হলো। উমর (রা.) বললেন, হে বালক তুমি কেন ফিরে এসেছো? আমিতো ধরে আনার জন্য তোমার পেছনে কোনো লোক পাঠাইনি। কোন জিনিস তোমাকে ফিরিয়ে আনলো? বালকটি বললো, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলিম কথা দিয়েছিলো কিন্তু সে তা রাখেনি। তাই আমি ফিরে এসেছি। উমর (রা.) আবু যরকে (রা.) বললেন, হে আবু যর! তুমি কেন এই বালকের জামিন হলে? আবু যর (রা.) বললেন, আমি দেখলাম একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন। আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন ছিলো কিন্তু কোনো মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি। এই কথা শুনে অভিযোগকারী দুই ভাই বললো, আমরাও চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিলো কিন্তু অন্য মুসলিম তাকে ক্ষমা করেনি।


Thursday, October 5, 2023

নিয়তি

 


হেদায়াত কি মানুষের নিজের কাছে, নাকি আল্লাহর হাতে? যদি আল্লাহর হাতে হয়- তাহলে মানুষ মৃত্যুর পরে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেদায়াত দেন নি, এতে আমার কী দোষ? এই প্রসঙ্গে আপনি কী বলবেন?


 ল্লাহ সর্বশক্তিমান। এখন তিনি যদি ইচ্ছে করেন, আপনাকে প্রাণ দেবেন; নতুবা প্রাণ কেড়ে নেবেন। আপনার কিছু করার নেই। যদি উনি ইচ্ছে করেন, আপনাকে হেদায়েত দিবেন। অথবা বিপথগামী করবেন; কিন্তু আপনার কাছে জবাবদিহি করবেন না। উনি চাইলে আপনাকে দোযখেও পুড়তে পারেন, আপনার কিছু করার ক্ষমতা নেই। এখানে যদি আপনার যুক্তি হয়— আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দেন নি, আমার কোন দোষ নেই। তাহলে উনি নির্দোষ ব্যক্তিকে দোযখে কেন পুড়াবেন? Answer is plain and simple! উত্তর একদম সোজা! সব আল্লাহর খেয়াল-খুশি আর তারই ইচ্ছেতে হবে, যুক্তিতর্ক বেহুদা। এটা ক্ষমতার ব্যাপার, সুবিচার-অবিচারের ব্যাপার নয়। 

উনি আপনাকে প্রাণ না দিলে আপনি কি করবেন?

সমাধান হলো— বিনা তর্কে আনুগত্য স্বীকার করুন, আর প্রার্থনা করুন। আপনি হেদায়তের ও সুকর্মের দ্বারা কিছুই পাবেন না। আপনি নামায পড়লেন, আল্লাহ সেটা কবুল করলেন না। সেই নামাযে কি হবে? আপনি রোযা রাখলেন, আল্লাহ সেটা কবুল করলেন না। আপনি কি জোরকরে রোযার ফযিলত কেড়ে নেবেন? ইবাদতের দ্বারা আপনি কিছুই কিনে নিচ্ছেন না। কিছু পাচ্ছেনও না। আপনি এসব করতে বাধ্য, আর বাধ্য কেন জানেন? আপনি শক্তিহীন, আর তিনি শক্তিমান। ইসলাম মানে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে শান্তি স্থাপন করা। আল্লাহ আপনাকে প্রাণ দিতে বাধ্য নন। আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য নন। আপনাকে জান্নাত দিতে বাধ্য নন। তিনি অনুগ্রহ করলে আপনি সব পাবেন; অন্যথায় কিছুই পাবেন না।

আমার দাদি মুরগি পুষতেন। মুরগির কোন অধিকার ছিলোনা, যে তাকে খাবার দিতেই হবে। তিনি অনুগ্রহ করে মুরগিকে খাবার দিতেন। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দিতেন। তবে যেদিন উনি ইচ্ছা করতেন; সেদিন মুরগি জবাই করে রান্না করে খেতেন। আপনি যদি সুবিচারের প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন— মুরগির তো কোন দোষ নেই, তার খাবার বন্ধ করা হবে কেন? আমিও বলি— হ্যা, কোনই দোষ নেই এবং কিছু করারও নেই। কারণ, মুরগির কোন ক্ষমতা নেই। না খেয়ে থাকতে হবে। ইচ্ছে হলে, প্রাণও দিতে হবে।

মোদ্দা কথা, শক্তি। আপনার যদি শক্তি থাকে আল্লাহকে চ্যালঞ্জ করে জোর করে জান্নাতে যাওয়ার, তাহলে চলে যাবেন। এখানে ধর্মকর্মের প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নিজের সুখ বা জান্নাত নিজেই বানিয়ে নিন। আর যদি না পারেন, তাহলে আজই ধর্মকর্ম (নামাজ, রোজা ইত্যাদি) শুরু করে দিন।


একটি রাত ও আমি

  একটু ভাবুন তো! আরেকটি রাত পেরিয়ে এলাম আমরা। এই রাতের আঁধারে কেউ ঘরে ঘরে হানা দিলো— চুরি করলো, ডাকাতি করলো, কেউ ছিনতাই করে পথের মানুষের আহা...