Tuesday, July 29, 2025

একটি রাত ও আমি

 


একটু ভাবুন তো!
আরেকটি রাত পেরিয়ে এলাম আমরা।
এই রাতের আঁধারে কেউ ঘরে ঘরে হানা দিলো—
চুরি করলো, ডাকাতি করলো,
কেউ ছিনতাই করে পথের মানুষের আহাজারি শুনলো না।
কেউ পুলিশের হাতেই ধরা পড়লো,
কারও ঠাঁই হলো হ্যান্ডকাফের নিচে,
কারও শুরু হলো জেলের নতুন অধ্যায়।
অন্যদিকে এই রাতেই কেউ সেজদায় গড়িয়ে পড়েছে—
ভোরের বাতাসে কান্না মিলেছে তাহাজ্জুদের ভাষায়।
কেউ কুরআনের আয়াতে ডুবে গেছে—
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا..."
(হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো...)

এই রাতেই কারও ঘরে নতুন প্রাণ এসেছে—
শিশুর কান্না ফুটেছে নিস্তব্ধতা ভেঙে।
আবার, কেউ বিদায় নিয়েছে নিঃশব্দে,
তাদের ঘুম আর ভাঙবে না কোনো সকালেই।
আর আমরা?
আমরা তো চোখ মেলে ভোর দেখে ফেলেছি!
আলহামদুলিল্লাহ—
নতুন সূর্য, নতুন সকাল,
আরও একবার সুযোগ!
কিন্তু থামুন একবার—
আমি কী করেছি এই রাতটুকুতে?
ফেসবুকের স্ক্রলে? অলস চায়ের কাপে?
নাকি চিন্তাহীন ঘুমে জীবনটাকে হেলাফেলায় ছেড়ে দিয়েছি?

ধরুন আমার জিন্দেগী ষাট বছরের—
তাহলে ঘুমেই পঁচিশ বছর চলে গেছে!
বাকি রইলো যতটুকু—
তাও কি কবরের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট?
জানেন তো?
মৃত্যু কখনো ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
ঘড়ির কাঁটা আটকে থাকে না তার জন্য।
তবুও আমরা বাঁচি—
যেন মৃত্যু কেবল অন্যদের জন্যই লেখা।

Tuesday, March 11, 2025

রাসূল সা. এর ইফতার

 

রাসূল (সা.)-এর ইফতার: সংযম, কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতার এক অনুপম শিক্ষা


ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ছিল সরলতা, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রতিটি কাজেই ছিল গভীর প্রজ্ঞা ও অনুকরণযোগ্যতা। রমজান মাসে তাঁর ইফতার পদ্ধতি শুধু শারীরিক ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যম ছিল না; বরং এটি ছিল আত্মশুদ্ধি, কৃতজ্ঞতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য শিক্ষা। এই নিবন্ধে আমরা রাসূল (সা.)-এর ইফতারের ধরন, তাঁর ইফতার সম্পর্কিত উপদেশ এবং এর শিক্ষামূলক দিক বিশদভাবে আলোচনা করব।

১. রাসূল (সা.)-এর ইফতারের ধরন
রাসূল (সা.) ইফতারের সময় বিলাসিতা পরিহার করতেন এবং সহজলভ্য, পুষ্টিকর ও উপকারী খাদ্য গ্রহণ করতেন।

(ক) খেজুর ও পানি: রাসূল (সা.)-এর প্রিয় ইফতার
রাসূল (সা.) সাধারণত তাজা খেজুর (রুতাব) দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত, তবে তিনি শুকনো খেজুর (তামর) খেতেন। আর যদি সেটাও না থাকত, তবে তিনি কিছু পানি পান করতেন।
হাদিস: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
"রাসূল (সা.) কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত, তবে শুকনো খেজুর খেতেন। আর যদি তাও না পাওয়া যেত, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।"
(আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৬; তিরমিজি, হাদিস: ৬৯৬)
এখানে আমরা রাসূল (সা.)-এর সংযম ও পরিমিতিবোধ দেখতে পাই। তাঁর ইফতারে ছিল না কোনো অতিরিক্ততা, বরং তিনি সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতেন।

(খ) রাসূল (সা.)-এর ইফতার সংক্রান্ত দোয়া
ইফতারের সময় রাসূল (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন, যা কৃতজ্ঞতা ও আশা প্রকাশ করে—
 "ذهب الظمأ وابتلت العروق وثبت الأجر إن شاء الله"
অর্থ: "তৃষ্ণা মিটে গেল, শিরাগুলো সতেজ হলো, আর আল্লাহ যদি চান তবে সওয়াব স্থির হয়ে গেল।"
(আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৭)
এই দোয়ায় আমরা রাসূল (সা.)-এর ঈমানী চেতনা ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই

২. রাসূল (সা.)-এর ইফতার সম্পর্কিত উপদেশ ও শিক্ষা
রাসূল (সা.) শুধু নিজে সংযমী জীবনযাপন করেননি, বরং তিনি তাঁর উম্মতকেও পরিমিত আহার ও দ্রুত ইফতারের তাগিদ দিয়েছেন।

(ক) দ্রুত ইফতার করা
রাসূল (সা.) ইফতারের সময় বিলম্ব না করে সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করতেন এবং উম্মতকেও দ্রুত ইফতার করার উপদেশ দিয়েছেন।
"মানুষ তখন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করবে।"
(বুখারি, হাদিস: ১৯৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১০৯৮)
এখানে রাসূল (সা.) ইফতারের সময়কে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত বিলম্বকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

(খ) অতিরিক্ত খাওয়া ও অপচয় না করা
রাসূল (সা.) পরিমিত খাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন এবং অপচয় নিষিদ্ধ করেছেন।
"আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখবে। তবে যদি সে বেশি খেতে চায়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য থাকা উচিত।"
(তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)
এটি বর্তমান সময়ের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক শিক্ষা, যেখানে মানুষ ইফতারকে অপচয় ও বিলাসিতার প্রতীক বানিয়ে ফেলেছে।

(গ) একসঙ্গে ইফতার করা
রাসূল (সা.) একা ইফতার করতেন না, বরং সাহাবাদের সঙ্গে বসে ইফতার করতেন এবং অন্যদেরও একত্রে ইফতার করার পরামর্শ দিতেন।
 "তোমাদের কেউ যেন একা খাওয়া-দাওয়া না করে; বরং একত্রে খাওয়া বরকতময়।"
(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
এখানে সামাজিক সংহতি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং দানশীলতার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।

৩. রাসূল (সা.)-এর ইফতার ও আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান
রাসূল (সা.)-এর ইফতার শুধু আধ্যাত্মিক দিক থেকে নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

(ক) খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুর শক্তি ও পুষ্টির এক সমৃদ্ধ উৎস। এতে রয়েছে—
কার্বোহাইড্রেট (প্রায় ৭০-৮০%) → দ্রুত শক্তি প্রদান করে
ফাইবার → হজমে সহায়ক
পটাশিয়াম → রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন → স্নায়ুবিক স্বাস্থ্য ও রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে
অতএব, রাসূল (সা.)-এর খেজুর দিয়ে ইফতার করার অভ্যাস আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অত্যন্ত কার্যকর।

(খ) পানি পান করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
রাসূল (সা.) খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত সিদ্ধান্ত।
দীর্ঘসময় রোজা রাখার পর পানি শরীরকে রিহাইড্রেট করে
এটি হজমে সাহায্য করে এবং কিডনির জন্য উপকারী

চিন্তাভাবনায়...
রাসূল (সা.)-এর ইফতার কেবল খাদ্য গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া ছিল না; বরং এটি ছিল সংযম, কৃতজ্ঞতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার এক পরিপূর্ণ অনুশীলন। তাঁর ইফতারের ধরন আমাদের শেখায়—

Monday, March 3, 2025

প্রার্থনা

 


হে আল্লাহ! 

বুদ্ধি দাও, শান্তি দাও; অনুভূতি দাও ও কল্পনা দাও। সৃষ্টিপথের মর্মকোষের মধুপানের ক্ষমতা দাও। জীবনকে আনন্দিত করো। স্বার্থক করো। উজ্জ্বল করো। উদ্যোমী করো। প্রাণবান করো। নিষ্ঠাবান করো। 

অন্তরে নিয়ত শিখার মতো জ্বালো—

বিকেরূ রূপে, বিচারবুদ্ধি রূপে। 

আমার প্রার্থনা খাঁটি করো। খাঁটি করো। খাঁটি করো।


হে আল্লাহ!

জীবনকে পবিত্র করো, শান্ত করো, স্নিগ্ধ করো। অবসাদ দূর করো, অবসাদ দূর করো। ইতর লোভের নাগপাশ থেকে মুক্তি দাও। পদ্মের মতো পঙ্কিলতার উর্ধ্বে ওঠার শক্তি দাও। আনন্দগ্রহনের ক্ষমতা দাও। 

আমার প্রার্থনা খাঁটি করো। খাঁটি করো। খাঁটি করো।

একটি রাত ও আমি

  একটু ভাবুন তো! আরেকটি রাত পেরিয়ে এলাম আমরা। এই রাতের আঁধারে কেউ ঘরে ঘরে হানা দিলো— চুরি করলো, ডাকাতি করলো, কেউ ছিনতাই করে পথের মানুষের আহা...