Thursday, October 12, 2023

মুসলিমদের আচরণ

 


উমর রা. -এর শাসনামল

একদিন দু’জন লোক এক বালককে টেনে ধরে হযরত উমর (রা.) এর দরবারে নিয়ে আসলো। উমর (রা.) তাদের কাছে জানতে চাইলেন, ব্যাপার কী? কেন তোমরা একে এভাবে টেনে এনেছো? তারা বললো, এই বালক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। উমর (রা.) বালককে বললেন, তুমি কী সত্যিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছো? বালকটি বললো, হ্যাঁ! আমি তাদের বাবাকে হত্যা করেছি। তবে তা ছিলো দুর্ঘটনাবশত। আমার উট তাদের বাগানে ঢুকে পড়েছিলো এবং তা দেখে তাদের পিতা একটি পাথর ছুড়ে মারলো, যা উটের চোখে লাগে। আমি দেখতে পাই যে, উটটি খুবই কষ্ট পাচ্ছিলো। যা দেখে আমি রাগান্বিত হই এবং একটি পাথর নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারি। পাথরটি তার মাথায় লাগে এবং সে মারা যায়। উমর (রা.) দু’ভাইকে বললেন, তোমরা কী এ বালককে ক্ষমা করবে? তারা বললো, না! আমরা তার মৃত্যুদণ্ড চাই। উমর (রা.) বালকটির কাছে জানতে চাইলেন, তোমার কী কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?


বালকটি বললো, ‘আমার পিতা মারা যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যান, যা আমি এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছি। আমি তিনদিন সময় চাই, যাতে আমি সেই জিনিসগুলো আমার ভাইকে দিয়ে আসতে পারি। আমার কথা আপনি বিশ্বাস করুন। উমর (রা.) বললেন, আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি, যদি তুমি একজন জামিন জোগাড় করতে পারো। যে নিশ্চয়তা দেবে যে তুমি ফিরে আসবে। বালকটি দরবারের চারদিকে তাকালো কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে কেউই তার জামিন হলো না। সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ দরবারের পেছন থেকে একটি হাত উঠলো। কার হাত ছিলো এটি? তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী আবু যর গিফারী (রা.)। তিনি বললেন, আমি তার জামিন হবো। চিন্তা করুন! জামিন মানে হলো, যদি বালকটি ফিরে না আসে তবে আবু যর গিফারীর (রা.) শিরছেদ করা হবে। সুতরাং বালককে ছেড়ে দেওয়া হলো। প্রথম দিন গেলো, দ্বিতীয় দিনেও বালকটি আসলো না।

তৃতীয় দিনে দু’ভাই আবু যর গিফারীর (রা.) কাছে গেলো। আবু যর (রা.) বললেন, আমি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে আবু যর গিফারী (রা.) দরবারের দিকে রওনা হলেন। মদিনার লোকজন তার পেছন পেছন যেতে লাগলো। সবাই দেখতে চায় কী ঘটে আজকে। আবু যর (রা.) একটি বালকের ভুলের কারণে আজ জীবন দিচ্ছেন। হঠাৎ আজানের কিছুক্ষণ আগে বালকটি দৌড়ে আসলো। লোকেরা সবাই অবাক হলো। উমর (রা.) বললেন, হে বালক তুমি কেন ফিরে এসেছো? আমিতো ধরে আনার জন্য তোমার পেছনে কোনো লোক পাঠাইনি। কোন জিনিস তোমাকে ফিরিয়ে আনলো? বালকটি বললো, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলিম কথা দিয়েছিলো কিন্তু সে তা রাখেনি। তাই আমি ফিরে এসেছি। উমর (রা.) আবু যরকে (রা.) বললেন, হে আবু যর! তুমি কেন এই বালকের জামিন হলে? আবু যর (রা.) বললেন, আমি দেখলাম একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন। আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন ছিলো কিন্তু কোনো মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি। এই কথা শুনে অভিযোগকারী দুই ভাই বললো, আমরাও চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিলো কিন্তু অন্য মুসলিম তাকে ক্ষমা করেনি।


Thursday, October 5, 2023

নিয়তি

 


হেদায়াত কি মানুষের নিজের কাছে, নাকি আল্লাহর হাতে? যদি আল্লাহর হাতে হয়- তাহলে মানুষ মৃত্যুর পরে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেদায়াত দেন নি, এতে আমার কী দোষ? এই প্রসঙ্গে আপনি কী বলবেন?


 ল্লাহ সর্বশক্তিমান। এখন তিনি যদি ইচ্ছে করেন, আপনাকে প্রাণ দেবেন; নতুবা প্রাণ কেড়ে নেবেন। আপনার কিছু করার নেই। যদি উনি ইচ্ছে করেন, আপনাকে হেদায়েত দিবেন। অথবা বিপথগামী করবেন; কিন্তু আপনার কাছে জবাবদিহি করবেন না। উনি চাইলে আপনাকে দোযখেও পুড়তে পারেন, আপনার কিছু করার ক্ষমতা নেই। এখানে যদি আপনার যুক্তি হয়— আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দেন নি, আমার কোন দোষ নেই। তাহলে উনি নির্দোষ ব্যক্তিকে দোযখে কেন পুড়াবেন? Answer is plain and simple! উত্তর একদম সোজা! সব আল্লাহর খেয়াল-খুশি আর তারই ইচ্ছেতে হবে, যুক্তিতর্ক বেহুদা। এটা ক্ষমতার ব্যাপার, সুবিচার-অবিচারের ব্যাপার নয়। 

উনি আপনাকে প্রাণ না দিলে আপনি কি করবেন?

সমাধান হলো— বিনা তর্কে আনুগত্য স্বীকার করুন, আর প্রার্থনা করুন। আপনি হেদায়তের ও সুকর্মের দ্বারা কিছুই পাবেন না। আপনি নামায পড়লেন, আল্লাহ সেটা কবুল করলেন না। সেই নামাযে কি হবে? আপনি রোযা রাখলেন, আল্লাহ সেটা কবুল করলেন না। আপনি কি জোরকরে রোযার ফযিলত কেড়ে নেবেন? ইবাদতের দ্বারা আপনি কিছুই কিনে নিচ্ছেন না। কিছু পাচ্ছেনও না। আপনি এসব করতে বাধ্য, আর বাধ্য কেন জানেন? আপনি শক্তিহীন, আর তিনি শক্তিমান। ইসলাম মানে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে শান্তি স্থাপন করা। আল্লাহ আপনাকে প্রাণ দিতে বাধ্য নন। আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য নন। আপনাকে জান্নাত দিতে বাধ্য নন। তিনি অনুগ্রহ করলে আপনি সব পাবেন; অন্যথায় কিছুই পাবেন না।

আমার দাদি মুরগি পুষতেন। মুরগির কোন অধিকার ছিলোনা, যে তাকে খাবার দিতেই হবে। তিনি অনুগ্রহ করে মুরগিকে খাবার দিতেন। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দিতেন। তবে যেদিন উনি ইচ্ছা করতেন; সেদিন মুরগি জবাই করে রান্না করে খেতেন। আপনি যদি সুবিচারের প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন— মুরগির তো কোন দোষ নেই, তার খাবার বন্ধ করা হবে কেন? আমিও বলি— হ্যা, কোনই দোষ নেই এবং কিছু করারও নেই। কারণ, মুরগির কোন ক্ষমতা নেই। না খেয়ে থাকতে হবে। ইচ্ছে হলে, প্রাণও দিতে হবে।

মোদ্দা কথা, শক্তি। আপনার যদি শক্তি থাকে আল্লাহকে চ্যালঞ্জ করে জোর করে জান্নাতে যাওয়ার, তাহলে চলে যাবেন। এখানে ধর্মকর্মের প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নিজের সুখ বা জান্নাত নিজেই বানিয়ে নিন। আর যদি না পারেন, তাহলে আজই ধর্মকর্ম (নামাজ, রোজা ইত্যাদি) শুরু করে দিন।


Thursday, September 21, 2023

তাকওয়া



 ❝ যদি তোমরা সত্যিকারভাবে আল্লাহর উপরে ভরসা করতে, তাহলে তোমাদেরকে সেভাবে রিযিক দেয়া হতো, যেভাবে পাখিদের রিযিক দেয়া হয়। পাখিরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলায় ভরাপেটে নীড়ে ফিরে আসে।


বর্ণনাকারী : উমার ইবনুল খত্ত্বাব রা.

সহীহ: তিরমিযী ২৩৪৪, ইবনু মাজাহ ৪১৬৪, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ১০, মুসনাদে আহমাদ ২০৫, আবূ ইয়া'লা ২৪৭।


Wednesday, September 20, 2023

আল্লাহ দয়াময়

 

আল্লাহর দয়া

চার ব্যক্তিকে (বিচারের জন্য) জাহান্নাম থেকে বেরকরে, আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে। তাদের মধ্যে একজন বারবার পিছনে তাকাতে থাকবে আর বলবে— 

হে আমার রব! যখন আমাকে এ জাহান্নাম থেকে বের করেছেন। তখন আমাকে আর সেখানে ফিরিয়ে নিবেন না। তখন আল্লাহ তায়ালা এ লোকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন। (সহীহ মুসলিম : ১৯২)

বর্ণনাকারী : আনাস ইবনে মালিক রা.

চোর বনাম ইসলাম

 


 এক ব্যক্তি রাসূলকে জিজ্ঞেস করলো— হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয়, আমি কি করবো? রাসূল সা. বললেন, তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে দিবে না। লোকটি বললো, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে লড়াই করে? রাসূল বললেন, তুমি তার সাথে লড়বে। লোকটি বললো, যদি সে আমাকে হত্যা করে? রাসূল বললেন, তুমি শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। লোকটি বললো, আমি যদি তাকে হত্যা করি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী হবে।

(সহীহ মুসলিম : ১৪০)

বর্ণনাকারী : আবু হুরায়রা রা.

তাওবা



কোন বান্দা পাপ করার পর যখন বলে, হে আমার রব! আমি পাপ করেছি, অথবা বলে: পাপে লিপ্ত হয়েছি আমাকে ক্ষমা করুন। তার রব বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর পাপে লিপ্ত হয় অথবা পাপ সংগঠিত করে, অতঃপর বলে: হে আমার রব, আমি দ্বিতীয় পাপ করেছি অথবা দ্বিতীয় পাপে লিপ্ত হয়েছি, আপনি তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহর যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর কোন পাপ করে অথবা বলেছেন: পাপে লিপ্ত হয়। তিনি বলেন: সে বলে: হে আমার রব আমি পাপ করেছি অথবা পাপে লিপ্ত হয়েছি আবারও, আপনি আমার জন্য তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমি আমার বান্দাকে তিনবারই ক্ষমা করে দিলাম, সে যা চায় আমল করুক”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।


বর্ণনাকারী : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু। 

বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ

 


 “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে[1], তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

বর্ণনাকারী : আবু হুরায়রা রা. 

  • এ থেকে প্রমাণ হয় যে, পাপ ত্যাগ করাও নেকি, যদি তা আল্লাহর জন্য হয়।

মৃত্যুর জন্য দোয়া করা

 


   ❝ কায়স রহ. বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব ইবনু আরাত রা. এর শুশ্রুষায় গেলাম। তিনি সাতটি দাগ লাগিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মউতের জন্য দোয়া করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে আমি অবশ্যই এর দোয়া করতাম। ❞

(সহীহ বুখারী- ৬৭৪০; বর্ণনাকারী, কায়েস ইবনে হা্যিম রহ.)

ইসলামে অভিবাদন জানানো



সালাম দেয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচারের নির্দেশ :

কুরআনে—
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত)

“যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” (সূরা নূর ৬১ আয়াত)

“যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।” (সূরা নিসা ৮৬ আয়াত)

“তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ’সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ’সালাম।’” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৫ আয়াত)

হাদীসে—

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ’আস রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ’সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আল্লাহ যখন আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ’তুমি যাও এবং ঐ যে ফিরিশ্তামন্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ’আসসালামু আলাইকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ’আসসালামু আলাইকা অরহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ’অরহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশী বললেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’ (মুসলিম)


সালামের পদ্ধতি—
প্রথমে যে সালাম দেবে তার এরূপ বলা (উচিত), ’আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’। এটা মুস্তাহাব। সে বহুবচন সর্বনাম ব্যবহার করবে; যদিও যাকে সালাম দেওয়া হয় সে একা হোক না কেন। আর সালামের উত্তরদাতা বলবে ’অআলাইকুমুস সালামু অরহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ, অর্থাৎ সে শুরুতে সংযোজক অব্যয় ’অ’ বা ’ওয়া’ শব্দ ব্যবহার করবে।

ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ’আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ’’ওর জন্য দশটি নেকী।’’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ’আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ’’ওর জন্য বিশটি নেকী।’’ তারপর আর একজন এসে ’আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ’’ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)

সালামের বিভিন্ন আদব-কায়দা—
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ’আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’ছোট বড়কে সালাম দেবে।’’

দ্বিতীয়বার সত্বর সাক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দিবে—
উক্ত রাবী (আবূ হুরায়রাহ রা.) হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের দু’জনের মাঝে গাছ বা দেওয়াল অথবা পাথর আড়াল হয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন আবার সালাম দেয়।’’ (আবূ দাঊদ)



ধৈর্য্য ধরুণ

 

আর শীঘ্রই আপনার রব আপনাকে এতই দেবেন যে , আপনি খুশী হয়ে যাবেন৷ তিনি কি আপনাকে এতিম অবস্থায় পাননি? তারপর আপনাকে আশ্রয় দেননি? তিনি আপনাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান, তারপর তিনিই পথ দেখান৷ তিনি আপনাকে নিঃস্ব অবস্থায় পেয়েছিলেন, অতঃপর আপনাকে ধনী করলেন। 

[সূরা আদ্ দ্বোহা]

Tuesday, September 19, 2023

নিরপরাধ প্রাণী হত্যা

মনে করুন, যদি একটি হরিণী আল্লাকে প্রশ্ন করে বসে, হে আল্লাহ! আমি তো তোমার কাছে কোনো পাপ করিনি কেন তুমি আমাকে বাঘকে দিয়ে খাওয়াচ্ছ? কেন তুমি আমার বাচ্চাদেরকে ক্ষুধার্ত রেখে কষ্ট দিয়ে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছো? তখন আল্লাহ্ হরিণীর এই কঠোর প্রশ্নের জবাব কী দিবেন?

এটা একটা ঘাস কাটার মেশিন। যন্ত্রটি চালু করে, ঠেলে নিয়ে গেলে, সবগুলো ঘাস সমান সাইজের কেটে দেয়।


এই সামান্য বিষয়টা আপনার কাছে এতো কঠোর লেগেছে, যে আপনি আল্লাহর কাছে বিচার দিতে চাইছেন। 3x4=? ; এই অংকটা একটা তিন বছরের শিশুর জন্য কঠিন অংক। অথচ, অংকটা খুবই সহজ। ঠিক তেমনই, আপনার এই কঠোর প্রশ্নটি আসলে খুবই সহজ।

ছবির এই যন্ত্রটি কখনো ব্যবহার করেছেন? ওটা একটা ঘাস কাটার মেশিন। যন্ত্রটি চালু করে, ঠেলে নিয়ে গেলে, সবগুলো ঘাস সমান সাইজের কেটে দেয়। দেখে সহজ মনে হলেও, কাজটিতে বেশ পরিশ্রম আছে।

এমন ঘাস কাটার সময় একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে। আশেপাশের বাতাসে কেমন যেন একটা ভেজা গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধটা এতই জোরালো যে, ঘাস কাটার দৃশ্য না দেখেও, শুধুমাত্র গন্ধের কারণে বলতে পারবেন, ওখানে কিছুক্ষণ আগে ঘাস কাটা হয়েছে।

এমন গন্ধের পেছনে কারণ হলো - আহত হয়ে, ঘাস এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। ওটা ঘাসের চিৎকার। ওটা ঘাসের কান্না।

উদ্ভিদের প্রাণ আছে। উদ্ভিদ আহত হয়, সাড়া দেয়, চিৎকার করে, কাঁদে। আওয়াজ করতে পারে না বলে, আপনি উদ্ভিদের কষ্টটা দেখেন না, বোঝেন না।

আপনার কঠোর প্রশ্নের ওই নিরীহ হরিণ, প্রতিদিন বারবার বিভিন্ন উদ্ভিদ আহত করে, হত্যা করে। ওই উদ্ভিদগুলো চিৎকার করে কাঁদে। ওই উদ্ভিদগুলো বারবার বলে - আমি কি অপরাধ করেছি, আমাকে হরিণ দিয়ে খাওয়াচ্ছ কেন?

আপনি হরিণকে যেমন নিরীহ মনে করছেন, সে তেমন নিরীহ নয়। আসলে কোন প্রাণীই নিরীহ নয়। নিজের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য, অন্য জীবকে হত্যা করে, শক্তি সংগ্রহ করে। এটাকেই আমরা খাদ্য বলি।

এই পদ্ধতিটি আল্লাহর সৃষ্টি। জীবন বাঁচিয়ে রাখার জীবনীশক্তি শুধুমাত্র আরেকটি জীবের মধ্যে পাওয়া যায়। এজন্যই একটি প্রাণী আরেকটি প্রাণীকে হত্যা করে শক্তি (খাদ্য) সংগ্রহ করে। সকল প্রাণীই অন্যকে হত্যার অপরাধী। সকল প্রাণীই অন্যের দ্বারা নিহত হবার ঝুঁকিতে আছে।


একটি রাত ও আমি

  একটু ভাবুন তো! আরেকটি রাত পেরিয়ে এলাম আমরা। এই রাতের আঁধারে কেউ ঘরে ঘরে হানা দিলো— চুরি করলো, ডাকাতি করলো, কেউ ছিনতাই করে পথের মানুষের আহা...